পশ্চিম ফুলমতি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই একটি আলোকবর্তিকা হয়ে কাজ করে আসছে। এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করা এবং নতুন প্রজন্মকে যোগ্য, সৃজনশীল ও নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। শিক্ষা শুধু পাঠ্যপুস্তক নির্ভর নয়—এটি মানুষের চিন্তাধারা, আচরণ, জীবনদর্শন এবং সামাজিক দায়িত্ববোধকে রূপ দেয়। তাই এই বিদ্যালয় তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ করেছে এমনভাবে, যাতে প্রতিটি শিক্ষার্থী জ্ঞান, নীতি ও দক্ষতায় সমৃদ্ধ হয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য ইতিবাচক অবদান রাখতে পারে।
১. মানসম্মত শিক্ষা প্রদান
বিদ্যালয়ের প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য হলো জাতীয় শিক্ষাক্রম অনুসারে উচ্চমানের শিক্ষা প্রদান। এখানে পাঠ্যক্রম এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যাতে শিক্ষার্থীরা শুধু পরীক্ষায় ভালো ফল করার জন্য নয়, বরং বাস্তব জীবনের সমস্যার সমাধানে যুক্তিসংগত ও বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনা করতে শেখে। শিক্ষকগণ আধুনিক শিক্ষাদান পদ্ধতি, মাল্টিমিডিয়া ক্লাস এবং ব্যবহারিক শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানকে বাস্তব জীবনের সাথে সংযোগ ঘটান।
২. নৈতিক ও মানবিক গুণাবলি গঠন
বিদ্যালয় বিশ্বাস করে যে শিক্ষা কখনোই কেবল জ্ঞানার্জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়—এটি মানুষের নৈতিক ও মানবিক গুণাবলি বিকাশেরও প্রধান মাধ্যম। তাই শিক্ষার্থীদের মধ্যে সততা, শৃঙ্খলা, দায়িত্ববোধ, সহমর্মিতা ও দেশপ্রেম জাগিয়ে তোলাই একটি বড় উদ্দেশ্য। দৈনন্দিন স্কুল কার্যক্রম, সহপাঠক্রমিক আয়োজন ও বিশেষ সেমিনারের মাধ্যমে এই মূল্যবোধগুলো অন্তরে গেঁথে দেওয়া হয়।
৩. প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা বিস্তার
বর্তমান যুগ প্রযুক্তির যুগ। তাই বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ করে তুলতে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। আইসিটি ল্যাব, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, ইন্টারনেট রিসার্চ এবং মাল্টিমিডিয়া ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে বাস্তব জ্ঞান অর্জন করে, যা ভবিষ্যতের চাকরি বাজার ও উচ্চশিক্ষায় তাদের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান তৈরি করে।
৪. সৃজনশীলতা ও গবেষণামুখী মনোভাব সৃষ্টি
শিক্ষার্থীদের শুধু বইয়ের জ্ঞান নয়, বরং সৃজনশীল চিন্তা ও গবেষণার আগ্রহ জাগানো এই বিদ্যালয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য। বিজ্ঞান মেলা, প্রজেক্ট প্রদর্শনী, সাহিত্য প্রতিযোগিতা ও বিতর্কের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নতুন ধারণা উদ্ভাবন ও বিশ্লেষণ করার সুযোগ পায়। এর মাধ্যমে তারা স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে শেখে এবং সমস্যা সমাধানে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করে।
৫. সহপাঠক্রমিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ
বিদ্যালয় জানে, শিক্ষার্থীর পূর্ণ বিকাশের জন্য কেবল বইয়ের জ্ঞান যথেষ্ট নয়। তাই ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সংগীত, নাটক, চারু ও কারুকলা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও কুইজ আয়োজনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা দলগতভাবে কাজ করার অভ্যাস, নেতৃত্বগুণ, আত্মবিশ্বাস ও সামাজিক দক্ষতা অর্জন করে।
৬. সমাজসেবা ও সচেতনতা বৃদ্ধি
বিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য কেবল শিক্ষার্থী তৈরি করা নয়, বরং সমাজসেবায় নিবেদিত মানুষ গড়ে তোলা। স্বাস্থ্য সচেতনতা কর্মসূচি, বৃক্ষরোপণ অভিযান, পরিবেশ রক্ষা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়। এতে শিক্ষার্থীরা সামাজিক দায়িত্ববোধসম্পন্ন হয়ে ওঠে।
৭. উচ্চশিক্ষার পথে অগ্রযাত্রা
মাধ্যমিক শিক্ষা হলো উচ্চশিক্ষার ভিত্তি। বিদ্যালয় নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিশেষভাবে প্রস্তুত করে, যাতে তারা উচ্চ মাধ্যমিক, বিশ্ববিদ্যালয় এবং পেশাগত শিক্ষায় সহজে প্রবেশ করতে পারে। এজন্য নিয়মিত মডেল টেস্ট, গাইডলাইন ক্লাস এবং ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং এর ব্যবস্থা রাখা হয়।
৮. সমঅধিকার ও অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিতকরণ
বিদ্যালয় প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে সমান সুযোগ দেওয়ার ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ। ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে সকলের জন্য সমান শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করা হয়। অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য ফি মওকুফ, বৃত্তি ও সহায়তা প্রদান করা হয়, যাতে আর্থিক বাধা তাদের শিক্ষার পথে অন্তরায় না হয়।